Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সংগঠন সংবাদ / আমাদের দীন ইসলাম, আমরা সবাই ভাই ভাই -ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

আমাদের দীন ইসলাম, আমরা সবাই ভাই ভাই -ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ

April 09, 2023 04:35:27 AM   স্টাফ রিপোর্টার
আমাদের দীন ইসলাম, আমরা সবাই ভাই ভাই -ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ

স্টাফ রিপোর্টার: 
‘বছর ঘুরে পবিত্র রমজান মাস আমাদের জীবনে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে আসে। এ মাসে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সারাদিন রোজা রাখি। এছাড়া বছরজুড়ে আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়ি, হজ করি, যাকাত দেই এবং আরও অনেক আমল নিখুঁতভাবে করে থাকি। কিন্তু এর পাশাপাশি একটি নিদারুণ বাস্তবতা আজ আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে, সেটা হচ্ছে এত আমল ও এবাদত বন্দেগি সত্ত্বেও বিশ্বময় মুসলমানদের উপরে অন্যায় অবিচার জুলুম চলছে, আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারছি না। এই রমজান মাসেও ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধ নেই, কোটি কোটি মুসলমান আজ উদ্বাস্তু। নিজেদের সমাজে অন্যায়-অবিচার, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, আমানতের খেয়ানত, ধর্ষণ, ঘুষ, ব্যাভিচার, খাদ্যে ভেজাল, অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে’বলেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। 
আজ শনিবার রাজধানীর উত্তরায় হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলপূর্ব আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  
তিনি বলেন, ওয়াজ-নসিহত, নামাজ, রোজা কিছুই তো কম হচ্ছে না। তাহলে কেন আজ মুসলিম জাতির এই অবস্থা? এর কারণ হল, আমরা আমাদের মূল কাজ, মূল এবাদতটি করছি না। যে জিনিসের যে কাজ সেটা করাই তার এবাদত। মানুষের কাজ কী সেটা আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির সূচনালগ্নেই জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, পৃথিবীতে আমি আমার প্রতিনিধি বা খলিফা স্থাপন করতে চাই। সুতরাং আমরা জানলাম যে এই পৃথিবীতে মানুষের মূল কাজ বা এবাদত হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত করা। মানুষ তা কীভাবে করবে? আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন তার হুকুম-বিধান অনুযায়ী মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় অর্থাৎ সামগ্রিক জীবন পরিচালিত করে শান্তি তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা। আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করলে সমাজের অন্যায় অবিচার যেমন বন্ধ হবে তেমনি বিশ্বময় আমাদের উপর চলমান অত্যাচার অবিচারও বন্ধ হবে। এই প্রতিশ্রুতি আল্লাহ কোর’আনে দিয়েছেন। 
তিনি আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খেলাফত (শাসনকর্তৃত্ব) দান করবেন, যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন।
ইতিহাস টেনে এনে তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে আমরা পাই, আল্লাহর রসুল (সা.) আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, খুনোখুনি, অশান্তি ও দারিদ্র্যে জর্জরিত আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সমাজকে আল্লাহর হুকুম তথা কোর’আনের বিধান দিয়ে আমূল পাল্টে দিলেন। আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন, না খেয়ে কষ্ট করেছেন, শত্রুর আঘাতে-আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন, দেশান্তরিত হয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষী- যতদিন তিনি দুনিয়াতে ছিলেন ততদিন এবং তাঁর ইন্তেকালের পরে সাহাবিরাও নিরবচ্ছিন্নভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রামের ফলে জাতি কয়েকশ’ বছর পর্যন্ত জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে পৃথিবীর সেরা জাতি ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সেই আদর্শ, লক্ষ্য, কর্মসূচি প্রেরণা কিছুই আজ আমাদের মাঝে নেই। এখন আমরা এক আল্লাহর বান্দা, এক নবীর উম্মত, এক কোর’আনের অনুসারী হয়েও হাজারো ফেরকা মাজহাব তরিকা ও রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় অনর্থক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অতি-বিশ্লেষণ, অতি ব্যাখ্যা নিয়ে হানাহানি করছি। এই অনৈক্যই আমাদের পরাজয় ও লাঞ্ছনার কারণ। 
এ অবস্থায় মুসলিম জাতির করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদের বক্তব্য হচ্ছে, আমাদেরকে এখন অতি দ্রুত একটি কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সেটা হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম-বিধান ছাড়া অন্য কারো হুকুম-বিধান মানি না এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রসুল। এটা আমাদের ঈমান। এই ঈমান যিনি আনবেন তিনি হলেন মো’মেন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-আদালত, রাষ্ট্রীয় তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালিত হচ্ছে পাশ্চাত্যের তৈরি হুকুম-বিধান দিয়ে, আল্লাহর হুকুম বিধান দিয়ে নয়। অথচ আল্লাহর নির্দেশ, তাঁর হুকুম বিধানের সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক অর্থাৎ অংশীদার করা যাবে না। করলে সেটা হবে শেরক। আর যারা শেরক করবে তাদেরকে তিনি কোনো অবস্থাতেই ক্ষমা করবেন না, তারা নামাজ রোজাসহ যত আমলই করুক না কেন। 
তিনি আবারো বলেন, যেহেতু আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর খেলাফত করা, আল্লাহর হুকুম দিয়ে দুনিয়া পরিচালনা করে মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আর আমলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নামাজ-রোজা-হজ-যাকাতসহ অন্যান্য আমলগুলোর মাধ্যমে মো’মেনের তাকওয়ার চরিত্র বা স˜গুণাবলী (অঃঃৎরনঁঃবং) সৃষ্টি করা, তাদেরকে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান করা। 
সবশেষে তিনি বলেন, আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করার মত বড় কাজ করার জন্য প্রয়োজন ইস্পাতের মত ঐক্য, কঠোর শৃঙ্খলা, নেতার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য, অন্যায়বিরোধী মানসিকতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা, নফস বা আত্মার ওপর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। এগুলো হাসিল করার জন্যই মো’মেনরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, সামর্থ্যবানেরা হজ করবে ও যাকাত দিবে, রমজান মাসে রোজা  রাখবে। এটাই হল ইসলামের সঠিক আকিদা যা দিয়ে আল্লাহর রসুল বিশ্বজয়ী জাতি সৃষ্টি করেছিলেন। যে জাতি অর্ধপৃথিবীতে শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হেযবুত তওহীদ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) সেই প্রকৃত ইসলামের দিকেই