Date: April 29, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সংগঠন সংবাদ / নিরাপদ সমাজ নির্মাণে নারী-পুরুষ সবাইকে অংশ নিতে হবে - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

নিরাপদ সমাজ নির্মাণে নারী-পুরুষ সবাইকে অংশ নিতে হবে

June 19, 2023 01:41:26 PM   নিজস্ব প্রতিনিধি
নিরাপদ সমাজ নির্মাণে নারী-পুরুষ সবাইকে অংশ নিতে হবে

-হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
আমরা যখন বিশ্বের বাস্তব সমস্যা ও সমাধানের জন্য আমাদের আদর্শ জনগণের সামনে তুলে ধরছি, আমরা বলছি যে, দাজ্জালীয় তন্ত্রমন্ত্রের একটা ব্যবস্থা বর্তমানে প্রচলিত। এই দাজ্জালীয় সভ্যতা মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সমস্তকিছু গ্রাস করেছে এই সভ্যতা। 
এর পরিবর্তে আল্লাহর দ্বীন যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে নারী-পুরুষ সবাইকে সমান তালে এই সংগ্রাম করতে হবে। পুরুষ যেমন সংগ্রামে নামবে, নারীদেরকেও তাদের স্বামী-ভাই-সন্তানদেরকে আল্লাহর পথে কোরবানি করতে হবে। তাদেরকে সংগ্রামের পথে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তবে নারীরা শুধু পরিবারের পুরুষদেরকে সংগ্রামের পথে অনুপ্রাণিত করবে তা নয়, বরং তাদের নিজেদেরকেও সংগ্রামের ময়দানে নামতে হবে। 
আমরা যখন এই সত্যটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমাদের গায়ে একটা সস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে একটি মহল। তারা প্রচার করে বেড়ান, আমরা ইসলামের শত্রু। তারা এতদিন চেষ্টা করে নারীদেরকে ঘরে ঢুকিয়েছেন। তারা মানুষকে বুঝিয়েছেন যে, সমস্ত পাপের মূল নারীরা। নারীদেরকে ঘরে ঢুকিয়ে তারা সব ফেতনা ও পাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলতে চান, ‘হেযবুত তওহীদ নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে পর্দা লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে। এটা খ্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্র।’ একজন তো বললেন, আমাদের সংগঠন নাকি কানাডার কোথায় তৈরি হয়েছে! মানুষকে উস্কানি দেওয়ার জন্য এমন মিথ্যাও তারা প্রচার করছে যে, আমাদের মেয়েরা নাকি পুরুষের জামাতে ইমামতি করে। এমনকি ভারতীয় অশ্লীল সিনেমার দৃশ্য হেযবুত তওহীদের মেয়েদের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। এখন তাদের ফতোয়া মোতাবেক আমরা হয়ে গেলাম মুলহেদ, কাফের, ইসলামের শত্রু, বেইমান।
প্রত্যেক বড় মাদ্রাসায় তাদের ফতোয়া বোর্ড আছে, সেখানে মুফতি আছে। সেই মুফতিরা ফতোয়া লিখে তাতে সিল দিয়ে দেয়, রায় দিয়ে দেয়। নিজেদেরকে তারা সুলতান ভাবে। এই সুলতানরা আমাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে দেয়, আমরা মুরতাদ হয়ে গেছি, আমরা মুলহেদ, কাফের।
সরকারের রায় কার্যকরী করার জন্য অথরিটি আছে, কর্তৃপক্ষ আছে, পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে। কিন্তু এই ধর্মীয় ফতোয়াকে কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বরং এই ফতোয়াবাজদের রয়েছে নিজস্ব কর্তৃপক্ষ, আলাদা বাহিনী। এরা নিজেরা মরবে না, অন্য দুর্বল অসহায় গোষ্ঠীর উপর হামলা করবে। তাদের মাদ্রাসায় আছে লক্ষ লক্ষ ছাত্র, তাদের আহ্বানে উত্তেজিত হয় কথিত তওহীদী জনতা। এরা ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার’ বলে লাফ দিয়ে মাঠে নামে, কখনও প্যান্ডেলের বাঁশ বেয়ে উপরে উঠে যায়। তারা রাজপথে মিছিল করে, ‘জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই। জিহাদ করে বাঁচতে চাই। মরলে শহীদ বাচলে গাজী, আমরা সবাই মরতে রাজি।’ অবশ্য তারা নিজেরা মরবে না, অন্যকে মারবে। তাদের হালকা ঠোঁট কেটে গেলেও কান্না জুড়ে দেয়, আর ওয়াজের মাঠে অন্যের পিঠের চামড়া তুলে ফেলার হুকুম জারি করে। তাদের এসব রায় অনেক জায়গায় কার্যকরী করেছে উন্মত্ত জনতা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর হামলা হয়েছে। তাদের মতের বিরুদ্ধে যারা গেছে তারাই এই গোষ্ঠীটির হামলার শিকার হয়েছে। তাদের এই কথিত জেহাদ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জেহাদ নয়, বরং ভিন্নমত পোষণকারীদেরকে দমন করার সন্ত্রাসী কৌশল। আর তাদের এই সন্ত্রাসী আক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছি আমরা হেযবুত তওহীদ। আমার নিজের বাড়িতে কয়েক দফা হামলা করা হয়েছে। সেখানে আমার কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এইসব হামলার কারণ তথাকথিত এসব ফতোয়াবোর্ডের রায়।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে- নারীদেরকে নিয়ে সংগ্রাম করা, নারীদেরকে দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করা, তাদেরকে ইসলামের সঠিক ধারনা দেওয়া, আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার সম্পর্কে অবগত করা- এটা কি অন্যায়? এটা অন্যায় নয়, বরং এটা এক ধরণের রেনেসাঁ। এটা এক ধরণের বিপ্লব।
আজকের এই সমাবেশ থেকে নারীদেরকে যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো- আপনাদের সামনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী আপনাদেরকে অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখবে। তারা বলবে ফেতনা থেকে নারীদেরকে রক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। কিন্তু ওদের দায়িত্ব ছিল সমাজ থেকে ফেতনা দূর করে তা একজন নারীর জন্য বসবাস উপযোগী করে তোলা। আল্লাহর রসুল (স.) ও তার সাহাবীরা সেটাই করেছিলেন। কিন্তু এই বিকৃত-বিপরীতমুখী ধর্মের ধারকেরা সেই দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে তসবির দানা টিপে অভ্যস্ত। সমাজের সব ধরনের সমস্যা, সংকট থেকে এরা শতমাইল দূরে থেকে গা বাঁচিয়ে চলে। সুতরাং এরা না পারবে বিপদে নিজেদেরকে রক্ষা করতে, না পারবে আপনাদেরকে সুরক্ষা দিতে। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো এই দেশে যদি কখনো সাম্রাজ্যবাদীদের হামলা হয়, তাহলে তারা আপনাদেরকে তাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে পালাবে। সুতরাং নিজেদেরকে গড়ে তুলুন। সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত করে তুলুন।” 
[শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হেযবুত তওহীদ আয়োজিত কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলন-২০২৩ এ প্রদত্ত বক্তব্যের একাংশ (কিঞ্চিত পরিমার্জিত)]