
ওবায়দুল হক বাদল:
রাজধানীতে ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় করণীয়’ প্রসঙ্গে আলোচনা সভা করেছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০টায় ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) -তে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসব সংঘাতের পেছনে ধর্মীয়, ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা কারণ রয়েছে। পরাশক্তিধর অস্ত্রব্যবসায়ী ও আধিপত্যবাদী ধনী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও সংকটপূর্ণ করে তুলছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে যুদ্ধ চলছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়ে গেল। বাংলাদেশকে নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে। এই মাটির উপরে অনেক শকুনের চোখ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অশনি সংকেত লক্ষ্য করছি আমরা।
‘যদিও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। কিন্তু কতক্ষণ বিরত থাকতে পারবে বলা মুশকিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। সূতরাং আমরাও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি।’ -মন্তব্য করেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশেও যদি কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের অবস্থা হয়ত গাজার মুসলমানদের মতো হতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ফেরকা-মাজহাব ভুলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে, হানাহানীর রাজনীতি বন্ধ করে বিভাজনের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে এক আল্লার হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্বা গড়ে তুলতে হবে। এক নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্বাই হবে বাংলাদেশের একমাত্র রক্ষাকবচ। -বলেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, “আমরা আল্লাহর দীনের আংশিক মানি আংশিক মানি না। একটা উদাহরণ দিলে বুঝবেন। আল্লাহ বলছেন, ‘কুতিবা আলাইকুমুসসিয়াম’ -এটা পবিত্র কোর’আনের একটা আয়াত। যার অর্থ হচ্ছে তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করে দেওয়া হলো। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘কুতিবা আলাইকুমুল কিতাল’ অর্থাৎ তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করে দেওয়া হলো। ‘কুতিবা আলাইকুমুল কিসাস’ -তোমাদের জন্য কিসাস ফরজ করে দিলাম। পরের দুইটা আয়াত আলেমরা আমাদের বলেন না, তারা শুধু রোজার কথা বলেন এর কারণ কি? কারণ তারা কিতাল বাদ দিয়েছেন। তাহলে কি আল্লাহর বিধানের আংশিক মানা হলো না? আল্লাহর বিধানের কিছু মানা আর কিছু না মানা এটাই হচ্ছে শিরক।”
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজ, কোর্ট-কাচারি, আইন-আদালত পরিচালনার মূল বুনিয়াদ বা ভিত্তি হতে হবে আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধানকে মানদণ্ড ধরে এই জাতির সামগ্রিক বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে হবে। অর্থাৎ জাতিকে আল্লাহর তওহীদের উপর ভিত্তি করে একটা ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্বায় পরিণত করতে হবে। সমগ্র জাতি হবে একটা জাতি, সমগ্র জাতির নেতা থাকবেন একজন। সমগ্র জাতির লক্ষ্য এক দিকে ধাবিত হবে। সমগ্র জাতির মেধা, জ্ঞান, সম্পদ, শক্তি একত্রিত করে জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। একটি সঠিক আদর্শের উপরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতিবিনাশী হানাহানীর রাজনীতি, ধর্মের নামে দলাদলী বন্ধ করে একটি শক্তিশালী জাতিসত্বা তৈরি করতে পারলে জাতির বিরুদ্ধে সকল ধরনের হুমকির মোকাবেলা করা সম্ভব ইনশাল্লাহ।
মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘হে মানুষ তোমরা আজকে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দ¦ারপ্রন্তে এসে দাঁড়িয়েছ। তোমাদের সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ কেউ থামাতে পারবে না। তোমাদের এই পরিণতির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর খেলাফত বাদ দিয়ে ইবলিসের খেলাফত করছ। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যদি তোমরা আবার আল্লাহর খেলাফতে ফিরে আস। যদি তোমরা বলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লহ আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কার হুকুম মানব না, তাহলেই তোমরা এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে বাঁচতে পারবে।’
হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, যুগ্ম নারী বিষয়ক সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা, ঢাকা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হারিসুর রহমান, ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস মিয়া, উত্তরা অঞ্চলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সভাপতি আরিফ উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেজবাউল ইসলাম, ফরিদপুর অঞ্চলের সভাপতি মাহবুবুল আলম নিক্কন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিভাগীয় সহ-সভাপতি আল আমিন সবুজ।
সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তোলাওয়াত করেন হেযবুত তওহীদের সদস্য গাজী শহীদুল হাসান আইয়ুবি। এরপর দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পী শাহীন আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত অতিথিদের উপস্থিতিতে হলরুম কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রধান অতিথির আগমনে স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
মধ্যাহ্নভোজের পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। যেখানে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথিগণ। এর আগে সারাদেশে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর সন্ত্রাসী হামলার উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।