
জাহিদুল ইসলাম: বাংলাদেশে টেকসই ও প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গঠনের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালা। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে আয়োজিত এ কর্মশালায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের অংশীজন অংশগ্রহণ করেন।
"প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন ও সেরা চর্চার প্রসার" শীর্ষক এ কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউট (IMS), আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও রেড অরেঞ্জ লিমিটেড। ‘প্লিজ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (SACEP), যার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রজেক্ট সার্ভিস অফিস (UNOPS)। বাংলাদেশে প্রকল্পটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে।
কর্মশালায় উপস্থাপিত হয় প্লাস্টিক বর্জ্য মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্ভাবন ও কার্যকর উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের IMS কর্তৃক উপকূলীয় এলাকায় সার্কুলার ইকোনমি মডেল চালু করে ২০,০০০-এর বেশি পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন; ঢাকার কল্যাণপুর খালে রেড অরেঞ্জ লিমিটেড কর্তৃক ভাসমান ব্যারিয়ারের মাধ্যমে ৬৫ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ ও আইওটি প্রযুক্তিতে দূষণ ট্র্যাকিং; সুন্দরবনে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক অডিট এবং নারী-অন্তর্ভুক্তিমূলক মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
সারাদেশে এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে প্রায় ৩,৮৪,০০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য। সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২৫০টি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ২,৩৬৬ জন বর্জ্য কর্মীকে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ নারী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “আমাদের অভ্যাস বদলাতে পারলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব। জুলাই মাস থেকে স্ট্র-এর উৎপাদন বন্ধে কাজ শুরু করা হবে। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ তৈরি করে তা সুলভমূল্যে জনগণের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস ও UNOPS কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরলিধরণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে উদ্ভাবনী সমাধান এবং অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
রেড অরেঞ্জ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী বলেন, “পরিষ্কার নদী, উপকূল ও কমিউনিটি যেন স্বপ্ন নয়, বরং জাতীয় মানদণ্ডে রূপ নেয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।”
আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আবদুল মোতালেব বলেন, “এ উদ্যোগগুলো শুধু পাইলট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হলে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।”
কর্মশালার শেষে অংশগ্রহণকারীরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উত্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট সিটি পরিকল্পনায় প্লাস্টিক বর্জ্য ট্র্যাকিং অন্তর্ভুক্ত করা; বর্জ্য সংগ্রাহকদের জন্য জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু; বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে প্লাস্টিক বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।