
আশিকুর রহমান, গাজীপুর:
'দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে, বড় কোন ঘটনা ঘটলে দেশ ও বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে' বিধায় গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইনে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়। আর সেই পরিকল্পনার বলি হয়ে মারা যান একজন রেলযাত্রী, আহত হন আরো দশজন। গত ১৩ ডিসেম্বর শ্রীপুরে রেললাইন কেটে সৃষ্ট নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। আটককৃতদের সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত।
রবিবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এসময় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জিএমপি কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি জানান, ঢাকায় যাওয়ার নাম করে গত ১২ ডিসেম্বর কোনাবাড়ি থেকে একটি হায়েস গাড়ি ভাড়া করে আসামীরা৷ পরে ড্রাইভারকে জিম্মি করে ঢাকায় না গিয়ে বরং গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নাশকতার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি জড়ো করে অভিযুক্তরা। পরে গভীর রাতে শ্রীপুরের বনখড়িয়া চিনাই রেল ব্রীজের নিকটে প্রায় ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলে তারা। এতে ভোররাতে দুর্ঘটনার শিকার হয় মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনায় সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন যাত্রীর মৃত্যু হয় এবং আরো দশ জন গুরুতর আহত হয়। জিএমপি কমিশনার জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি খুবই কম ছিল। ট্রেনটি স্বাভাবিক গতিতে থাকলে শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হতে পারতো বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। আর দলীয় উচ্চ পর্যায়ের চাপ বাস্তবায়নে এমনটাই চাওয়া ছিল নাশকতাকারীদের, জানান পুলিশ কমিশনার মাহবুব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুর মহানগরের ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হাসান আজমল ভূইয়া(৫০), নেত্রকোনা জেলার মদন থানার বারই বাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে জান্নাতুল ইসলাম(২৩), ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার বান্দীয়া এলাকার তাইজুদ্দীনের ছেলে মেহেদী হাসান(২৫), গাজীপুর মহানগর সদর থানাধীন ২৪নং ওয়ার্ডের তারিকুল ইসলাম দিপুর ছেলে জুলকাইন নাইন আশরাফি(৩৫), গাজীপুর মহানগরের সদর থানাধীন ছায়াবীথি এলাকার মৃত সোলায়মান মোড়লের ছেলে শাহানুর আলম(৫৩), সদর থানাধীন কানাইয়া পূর্বপাড়া এলাকার মৃত ওমেদ আলী মোল্লার ছেলে মোঃ সাইদুল ইসলাম(৩২) ও গাজীপুর মহানগরের ২৪নং ওয়ার্ডের মধ্য ছায়াবীথি এলাকার আফতাব উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা(৩৮)। তারা সকলেই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।
জিএমপি কমিনশনার আরো জানান, গত ১১ ডিসেম্বর গাজীপুর মহানগরের ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি'র সাবেক নেতা হাসান আজমল ভূইয়ার সভাপতিত্বে তার বাসাসহ বিভিন্নস্থানে নাশকতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা করা হয়। পরদিন হায়েস ভাড়া করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ব্যবহৃত হায়েস গাড়ি ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।