জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর পদত্যাগের খবর ঘিরে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে দলে তৈরি হয় আলোড়ন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও এনসিপির শীর্ষ নেতারা একে ‘গুজব’ বলে দাবি করেছেন।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কনফার্ম করছি, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর পদত্যাগের যে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এমন অসত্য ও মনগড়া খবরের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।”
একইভাবে, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশিরও ফেসবুকে লিখেছেন, “নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পদত্যাগ করেননি। তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন।”
এরই ধারাবাহিকতায়, গভীর রাতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাঠানো এক বার্তায় এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী আমাদের সাথেই কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি নির্বাচন কমিশনে পার্টির নিবন্ধন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বও পালন করেছেন। মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তার পদত্যাগ বা অব্যাহতির বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়।”
তবে এর কিছুক্ষণ আগে একটি জাতীয় গণমাধ্যম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়—নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পদত্যাগ করেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে যোগ দিতে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দলে “নির্বাচন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালক” পদে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী, এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে মৌন সম্মতি দিয়েছে। এতে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করে গণমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাম্প্রতিক সময়ে দলের কার্যক্রম থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছেন। গত ১৭ অক্টোবর ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’ নামে নতুন একটি অঙ্গসংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। পদত্যাগ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
একই প্রতিবেদনে দলের এক যুগ্ম সদস্যসচিবের বরাত দিয়ে বলা হয়, পদত্যাগপত্র দল পেয়েছে, তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি—বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর সঙ্গে ফোন ও টেক্সটের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
সব মিলিয়ে, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর পদত্যাগের গুঞ্জন ঘিরে এনসিপির অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিষয়টিকে “অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র” ও “গুজব” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন দলীয় সিদ্ধান্ত বা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্যই স্পষ্ট করবে—এই বিতর্কের আসল সত্যতা কী।