
জাবের হোসেন:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় মামার চুরির অপরাধে সদ্য বিবাহিত ভাগ্নীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিচার চাইতে নির্যাতিতার মা দ্বারে দ্বারে গেলেও প্রভাবশালীর মহলের চাপ সৃষ্টি চলছে পরিবারের ওপর বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। তারা এখন বাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে । ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (৫-৯-২০২৩) দিবাগত রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব বিলবিলাস গ্রামে।
তবে ধর্ষণের মতো কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তরা। মামা কর্তৃক টাকা চুরির বিষয় নিয়ে কলহের জেরে বিষয়টিকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
একাধিক সূত্রে, সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা জানান, বাউফল থানা ব্রিজের ঢালে কাচা মালের ব্যাবসায়ী আল ইসলামের বাসায় ভাড়া থাকতো পূর্ব বিলবিলাস গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফিক। শফিক ওখানে থেকে আল ইসলামের ভাড়ায় চালিত আটোরিক্সা ভাড়া চালাতো। শফিক সেই অটোরিক্সা বিক্রি করে এবং একটি ছাগল চুরি করে নিজের বাড়ি বিলবিলাস চলে আসে এমন দাবি করে মঙ্গলবার (৫ই সেপ্টেম্বর) সকালে কাচামাল ব্যবসায়ী বাড়ির মালিক আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম শফিককে খুজতে এবং মালামাল উদ্ধার করতে শফিকের বাড়িতে আসে। পূর্বেই আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম স্থানীয় চৌকিদার শামীমকে খবর দিয়ে সাথে করে নিয়ে আসেন। সেখানে তারা চুরি হওয়া ছাগল পায় বলে দাবি করে আল ইসলাম। এদিকে ওইদিন মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম আরও দুই একজন ছেলেপান নিয়ে শফিকের বোন তাসলিমা বেগমের বাড়ি এসে শামীম চৌকিদারের সহযোগিতায় রাত ৯টার দিকে তাসলিমা বেগমের মেয়ে ওই সদ্য বিবাহিত শফিকের ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাইকে নিয়ে ইব্রাহিম বাউফল চলে যায়। রাত ১টার দিকে ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাই বাড়িতে ফিরে আসে। পরে শুনতে পাওয়া যায় যে ভাগ্নী জামাইকে অন্য জায়গায় রেখে ভাগ্নীকে নির্যাতন করা করেছে।
স্থানীয় শামীম চৌকিদার বলেন, আল ইসলামের বাসায় ভাড়া থেকে শফিক নাকি তাদের ছাগল ও অটোরিক্সা চুরি করে চলে এসেছে এমন খবর পেয়ে আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম সহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে শফিকের বোন তাসলিমা বেগমের ঘর থেকে চুরি হওয়া ছাগল উদ্ধার করা হয়। পুনরায় ইব্রাহিম ওইদিন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে শফিকের বাড়িতে আসলে সেখানে তাদের খবর পেয়ে আমিও উপস্থিত হই। এসময় ওই ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাই নাকি চোরের বাড়ি থাকবেনা তাই তাদের নিয়ে গিয়ে বাসস্ট্যান্ড জামাইয়ের ৩ জন লোকের কাছে তাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসি। পরের দিন বুধবার সকালে আমাকে খবর দিয়ে ভাগ্নী ও ভাগ্নীর মা-সহ জামাই জানায় যে ভাগ্নীকে নাকি নির্যাতন করা হয়েছে। তখন তাদের আমি বলেছি আপনারা আইনের আশ্রয় নিন।
ওই মেয়ের মা তাসলিমা বেগমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেঁদে ফেলে অভিযোগ করেন, আমার সর্বনাশ হয়েছে। কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় শামীম চৌকিদারের মাধ্যমে রাতে প্রথমে আমার সদ্য বিবাহিত মেয়ে জামাইকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জামাইয়ের মাধ্যমে মেয়েকে ডেকে নিয়ে তারা সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে। মেয়ে ও জামাই রাত ১টার দিকে বাড়ি ঢুকে ধর্ষণের কথা জানায়। এ ব্যাপারে আমি বিচার চাইতে থানায় যেতে পারছিনা। বাবুল কমিশনার নাকি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাদের আশ্বাস দেন। টাকা পয়সা দিবেন বলে অফার করেন, আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে বাবুল কমিশনার বলেন, তেমন কিছু না। বিষয়টি হলো টাকা চুরির বিষয় নিয়ে। এখানে ধর্ষণের মতো কিছু ঘটে নি।
কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের কাছে সরেজমিনে ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে চলে যান। ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিমের কাছে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করে কথা না বলায় কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এমন ঘৃন্য কাজ আমি ভাবতেই পারিনা। আমি এই মুহূর্তে ঢাকাতে আছি। তবে অপরাধী যেই হোক না কেন সে অপরাধের সাজা পাক এটাই আমার কামনা।
এ বিষয়ে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।