
বৃষ্টির দিনে আমরা যখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করি, তখনই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর প্রশাসনিক ভবনের পাশের খালি জায়গায় কয়েকজন নারী নতজানু হয়ে কাজ করছেন। চারদিকে কাদা, টিপটিপ বৃষ্টি আর স্যাঁতসেঁতে বাতাস- তবুও থেমে নেই তাঁদের জীবনের চাকা।
কেউ ঘাস তুলছেন, কেউ বস্তায় ভরছেন, কেউ আবার মাটিতে হেলে পড়ে অদ্ভুত এক নিষ্ঠা ও মমতায় কাজ করে যাচ্ছেন। এটি কোনো প্রশিক্ষণ মাঠ নয়, বরং অবহেলিত এক ফাঁকা জায়গা, যেখানে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। আর এই নারী শ্রমিকরাই যেন এই নীরব যুদ্ধের অগ্রসেনানী।
তাঁদের কারও পরনে ভেজা শাড়ি, কারও হাতে ছেঁড়া গ্লাভস কিংবা কারও পায়ে নেই কোনো স্যান্ডেল- তবুও কোনো অভিযোগ নেই, বিরতি নেই। হয়তো সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার তাগিদেই তাঁরা এই ভিজে মাটির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।
এই দৃশ্য দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ থমকে দাঁড়ান, কেউ ক্যামেরায় বন্দি করেন, কিন্তু এই পরিশ্রমের গভীরতা বুঝে ওঠা কি সবার পক্ষে সম্ভব?
আমরা যারা উন্নয়ন, নীতিমালা কিংবা শ্রমিক-অধিকার নিয়ে কথা বলি, আমাদের কি চোখ পড়ে এমন মানুষের দিকে? যাঁরা প্রকৃত অর্থেই জীবনযুদ্ধের সৈনিক?
এইসব নারী শ্রমিকের জন্য প্রয়োজন সম্মান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পারিশ্রমিক। তাঁদের হাতেই গড়ে ওঠে পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ভবিষ্যৎ। তাঁদের শ্রম শুধু চোখে দেখার নয়- হৃদয়ে ধারণ করার মতো শিক্ষা।
এ এক নিঃশব্দ পাঠ- যেখানে শিখি, কাজই জীবনের গতি আর সংগ্রামই মানুষের শক্তি।