Date: May 07, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / সালথায় লাগামহীন পেঁয়াজ বীজের দাম: শঙ্কায় চাষিরা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

সালথায় লাগামহীন পেঁয়াজ বীজের দাম: শঙ্কায় চাষিরা

November 11, 2024 06:24:14 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
সালথায় লাগামহীন পেঁয়াজ বীজের দাম: শঙ্কায় চাষিরা

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে মৌসুমে মোট জমির ৯০ ভাগেরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং হালি পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে উপজেলার পেঁয়াজ চাষিরা। চলতি বছরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষক। আর এই সুযোগে কিছু সীড কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছে পেঁয়াজ বীজের দাম, আর এই লাগামহীন দামের কারণেই চলতি মৌসুমে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় পেঁয়াজ চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে যাবে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টরে, যা মোট জমির প্রায় ৯০ ভাগের বেশি। বর্ষাকালে জমিতে প্রচুর পলি পড়ে জমি হয় উর্বর। বর্ষার পানি নামার সাথে সাথে কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে পেঁয়াজ চাষে। প্রতিটি পেঁয়াজে কৃষাণ-কৃষাণীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়া লেগে থাকে। তাই পেঁয়াজ চাষ যেন এই স্থানের ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। পূর্বে কৃষক দেশি তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ করলেও চাহিদা ও লাভের কথা চিন্তা করে বর্তমানে হাইব্রিড ও কিং জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ করছে।

কয়েকজন পেঁয়াজ চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, "আপনারা সহজেই স্বল্প মূল্যে যে পেঁয়াজ বাজারে পান, তা উৎপাদন করতে কৃষকের অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন আর আগের মতো নেই, প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। জমির বার্ষিক লিজ, বীজ, সার ও কীটনাশক, সেচ, চাষাবাদ, শ্রমিকের মজুরি, সংরক্ষণ ব্যয়, ঝুঁকি, পরিবহন খরচসহ পেঁয়াজ চাষে খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বাজারে বেশিরভাগ সময়ই পেঁয়াজের দাম কম থাকে। কৃষক কম দামে গ্রামের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও শহরে তা অনেক বেড়ে যায়। তখন কৃষক অসহায় হয়ে পড়ে। তাই উৎপাদন ব্যয় কমাতে চাইলে প্রথমে পেঁয়াজ বীজের দাম কমানোর দাবি জানাই। এছাড়া পেঁয়াজ চাষে কৃষকের জন্য প্রণোদনা বাড়ানোরও দাবি জানাই।"

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে এবার রেকর্ড করেছে পেঁয়াজ বীজের দাম। কোনো বীজের উৎপাদন ভালো হলে সেই বীজের চাহিদাও বেড়ে যায়। আর এই সুযোগে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী, ডিলার ও সীড কোম্পানি বীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বীজের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক চাষি এবার পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আর এ জন্য পেঁয়াজ বীজের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখার অনুরোধ করেছেন সবাই। তাছাড়া পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা বৃদ্ধি ও মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ আমদানি না করার দাবি করেছেন উপজেলার পেঁয়াজ চাষিরা।

কয়েকজন পেঁয়াজ বীজ চাষির সাথে কথা হলে জানা যায়, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে সরকারি কোনো প্রণোদনা নেই। তাছাড়া বীজ উৎপাদনের জন্য আকারে ছোট ও উৎকৃষ্ট গুটি পেঁয়াজ কিনতে হয়। এগুলো সহজে পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা দাম বেশি ও মান খারাপ। তাছাড়া পেঁয়াজ বীজ চাষে কৃষকদের তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই, যা আছে তা সেই আদি পুরোনো। স্থানীয়ভাবে ভালো মানের পেঁয়াজ বীজ চাষ করতে পারলে তা দাম ও সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিরা সুবিধা পাবেন।

সালথা সদর বাজারের সার ও বীজ ব্যবসায়ী মোঃ সরোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, "বাজারে হাইব্রিড জাতের কিং পেঁয়াজের বীজের চাহিদা বেশি। আমাদের কাছে ৫-৬টি কোম্পানির কিং জাতের পেঁয়াজ বীজ ও দেশি জাতের ২-৩টি কোম্পানির পেঁয়াজ বীজ রয়েছে। কিং জাতের পেঁয়াজ বীজ ১০ থেকে ৩২ হাজার ও দেশি তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ বীজ ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেশি দামে বীজ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কৃষক দাম দেখে যাচাই করে বীজ ক্রয় করেন। যদি কোনো ব্যবসায়ী বা ডিলার বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"

তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজ বীজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খুচরা বিক্রেতা চাইলে সামান্য কিছু দাম বাড়াতে পারে, তবে ডিলার ও কোম্পানি নিজেরাই দাম বাড়ায়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। সরকারিভাবে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করলে এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যারা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করবেন, তাদের ভর্তুকি দিয়ে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।"

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, "বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। স্থানীয় কৃষকের মাঝে কিং জাতের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা বেড়েছে। আমরা খবর পেয়েছি কিছু অতি লোভী অসাধু ব্যবসায়ী, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা কিং জাতের পেঁয়াজ বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।"

সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বালী বলেন, "পেঁয়াজ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল। কোনো ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা পেঁয়াজ বীজের অতিরিক্ত দাম রাখলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"