
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে অভাবের তাড়নায় ৮শ’ টাকার বিনিময়ে নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করলেন প্রতিবন্ধী গর্ভধারিণী মা। অন্যদিকে তিনি নিজেও জানেন না শিশুটির বাবা কে। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বাতেন মোড় গুচ্ছ গ্রামে।
জানা যায়, ১১ বছর আগে রানা নামে এক ব্যক্তির সাথে ফেরদৌসি বেগমের বিয়ে হয়। তবে তিন বছর আগে রানার সাথে তার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তারপর থেকে অভাবের সংসারে দুই ছেলেকে নিয়ে কঠিন দিনানিপাত শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে খারাপ পথে পা বাড়ান। ছেলেদের মানুষ করতে দেহ ব্যবসায় নামেন প্রতিবন্ধী ফেরদৌসি। খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার জন্যই বিভিন্ন মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তিনি। এভাবেই তার পেটে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একটি সন্তানের জন্ম হয়। বাচ্চাটির প্রকৃত বাবা কে, সেটাও জানেন না ফেরদৌসি।
পরবর্তীতে প্রসব ব্যথা উঠলে ঠাকুরগাঁও মাতৃসদন হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। নিজের চিকিৎসার খরচ এবং শিশুটির খরচ বহন করার মতো কেউ না থাকায় ৮ শত টাকা নগদ নিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নবজাতক শিশুটিকে তুলে দেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বরুনাগাঁওয়ের এক লোকের কাছে। নাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তার নাম জানেন না।
এলাকাবাসী জানান, ফেরদৌসি দুই ছেলেকে নিয়ে গুচ্ছ গ্রামে আসেন। তখন তার স্বামী ছিল না। পরবর্তীতে একাধিকবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তার স্বামী নেই। তবে আমরা তার ঘরে একাধিক পুরুষকে ঢুকতে দেখেছি। এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি তাদের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে ততটা ভাবিনি। কিন্তু স্বামী না থাকার পরও তার গর্ভে সন্তান থাকায় আমরা অবাক হই। গতকাল বাচ্চাটি জন্মের পরপরই তিনি সেটিকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রতিবন্ধী মা ফেরদৌসি বলেন, “আমার স্বামী রানা অন্য একজনকে বিয়ে করে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। আমি একটা বুড়ার কাছে টাকা পেতাম। তার কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি আমার সাথে জোর করে খারাপ কাজ করেন। আবার অন্য একটা জায়গায় বেড়াতে গেলে সেখানেও আমাকে এক ছেলে জোর করে খারাপ কাজ করে। দুই ছেলে নিয়ে আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।”
তিনি আরও জানান, অভাবের তাড়নায় খারাপ কাজে জড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এক দম্পতির সাথে আলোচনা হয় যে, যদি ছেলে সন্তান হয়, তবে তারা নিবেন। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মানোর পর তার চিকিৎসার খরচসহ যাবতীয় খরচ তারা বহন করেন। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ৮০০ টাকা দিয়ে নবজাতকটিকে নিয়ে যান।
অন্যদিকে সুশীল সমাজের অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নবজাতক শিশু ক্রয় বা বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ অপরাধ। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফেরদৌসি বেগম সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন এবং প্রতিবন্ধী ভাতাও পান। নিজে পরিশ্রম করে উপার্জন না করে এ ধরনের খারাপ কাজে জড়ানো সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই বিষয়টি তদন্ত করে বাচ্চাটির সুন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফেরদৌসির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন তারা।