
পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি সামাজিক রীতি হলো ‘শ্রম বিনিময়’। এ প্রথার মাধ্যমে কৃষকরা একে অপরের ধান কাটা, মাড়াই এবং গোলায় তোলার কাজ করেন। এতে কৃষকের সময় এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয়।
এই রীতিকে পাহাড়ের নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের ভাষায় ‘লাক্চা’ নামে চেনে। শুধু ধান চাষ নয়, অন্যান্য কাজেও এই প্রথার প্রয়োগ দেখা যায়। তবে ধান চাষের ক্ষেত্রেই এটি বেশি প্রচলিত।
সম্প্রতি বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের তুংখ্যং পাড়ায় এক কানি জমির ধান একদিনেই কেটে, মাড়াই করে এবং গোলায় তোলা হয়েছে। এতে ১৪ জন পাড়াবাসী বিনামূল্যে শ্রম দিয়েছেন। জমির মালিক মংহ্নাই মারমা বলেন, “এতে আমার প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ বেঁচেছে। তবে আমি অন্যদের ক্ষেতেও এমন শ্রম দিতে বাধ্য।”
শ্রম বিনিময়ের সময় কৃষকেরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজের আয়োজন করেন। স্থানীয় চাষি সুইসিংউ মারমা বলেন, “এই প্রথার মাধ্যমে একদিকে খরচ বাঁচে, অন্যদিকে কাজ দ্রুত শেষ হয়। এছাড়া এটি আমাদের ঐতিহ্যগত সামাজিক মূল্যবোধের অংশ।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন, “পাহাড়ে চাষাবাদের ক্ষেত্রে ফসল কর্তন বা সংগ্রহের সময় প্রতিবেশীরা বিনা পারিশ্রমিকে একে অপরকে সহযোগিতা করে। এতে ফসল দ্রুত ঘরে তোলা যায়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে প্রতিবেশিসুলভ আন্তরিকতার চর্চাও হয়।”
তিনি আরও বলেন, “একসময় সমতল এলাকাতেও এই ধরনের সহযোগিতার প্রথা ছিল। কিন্তু আধুনিক সময়ে তা হারিয়ে গেছে। পাহাড়ের কৃষকেরা এখনও এই রীতিকে ধরে রেখেছেন, যা আমাদের সংস্কৃতির একটি অনন্য দিক।”
কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বান্দরবান জেলায় আমন ধানের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২৪১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৯৯ মেট্রিকটন। এখনো ধান কাটার কাজ চলমান। এই শ্রম বিনিময়ের প্রথা পাহাড়ের মানুষের জীবনে কেবল চাষাবাদে নয়, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।