Date: May 07, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / মাদারীপুরে দাফনের একমাস পর গৃহবধুকে লাশ উত্তোলন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

মাদারীপুরে দাফনের একমাস পর গৃহবধুকে লাশ উত্তোলন

May 28, 2023 08:45:26 PM   দেশজুড়ে ডেস্ক
মাদারীপুরে দাফনের একমাস পর গৃহবধুকে লাশ উত্তোলন

মাদারীপুরে যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধু কেয়া মনি ওরফে লিয়া নামের গৃহবধূ কে হত্যার অভিযোগ দেয় নিহতের পরিবার। সে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় একমাস পর রবিবার সকালে লিয়ার লাশ কবর থেকে পুন:রায় ময়না তদন্তের জন্য তোলা হয়।

জানা যায়, ঘটনার পরে নিহতের বাবা থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলে রিপোর্ট পাওয়ার আগে মামলা নিতে অসম্মতি জানায় থানা পুলিশ। পরে নিহতের বাবা বাদি হয়ে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃরায় ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করেন মামলার বাদি (নিহতের বাবা)। সে আবেদনের ভিত্তিতে কোর্টের আদেশে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফুয়াদ হাসান লাশ উত্তোলন করে পুনঃরায় ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। নিহতের পরিবারের দাবি হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সঠিক তদন্ত রিপোর্ট করা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তে সঠিক রিপোর্টসহ ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা।

মামলা নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর পৌর এলাকার ছোবাহান কবিরাজের মেয়ে লিয়া মনি ওরফে লিয়ার উপজেলার দুধ খালি ইউনিয়নের এওজ গ্রামের কালাম সরদারের ছেলে মাসুদ সরদারের সাথে প্রায় দু’বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই মাসুদ ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের টাকার জন্য বিভিন্ন মানষিক ও শারিরীক নির্যাতন করে আসছে। এনিয়ে কয়েক দফা পারিবারিক ভাবে মিটমাটও হয়। এর মধ্যে নিহত কেয়ার সংসারে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়। ওই শিশু সন্তানের নাম রাখা হয় লাবিব, বয়স প্রায় ৮ মাস। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে পুনরায় যৌতুকের টাকার জন্য চাপ নিহতের স্বামী মাসুদ ও পরিবার। তবে বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে মাসুদ ও তার পরিবার শুরু করে মারধর শারীরিক নির্যাতন। মারধরের এক পর্যায়ে নিহত লিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। গৃহবধূর মৃত্যু নিশ্চিত হলে মাসুদ ও পরিবার এবং বাড়ির লোকজন মিলে পরিকল্পনা করে লিয়ার গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে ঘরের সাথে ঝুলিয়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি আশেপাশের লোকজন বুঝতে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে নিহত ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনার পরে নিহতের বাবা থানায় হত্যা মামলা করতে চাইলে রিপোর্ট পাওয়ার আগে মামলা নিতে অসম্মতি জানায় থানা পুলিশ। পরে নিহতের বাবা বাদি হয়ে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে পুন:রায় ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করেন মামলার বাদি(নিহতের বাবা)। সে আবেদনের ভিত্তিতে কোর্টের আদেশে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। নিহতের পরিবারের দাবি হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সঠিক তদন্ত রিপোর্ট করা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্তে সঠিক রিপোর্ট সহ ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা।

নিহতের বোন সাবিনা বলেন, পরিকল্পিত ভাবে আমার বোনকে যৌতুকের টাকার জন্য মেরে ঘরে ভেতর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা মাসুদ ও তার পরিবারের সকলের ফাঁসি চাই। আমার বোনের সাথে যা ঘটেছে পৃথিবীর অন্য কোন মেয়ের সাথে যেন না ঘটে। এবার তদন্ত হলে সত্যিটা বের হয়ে আসবে বলে আশা করি। আমরা সরকার প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচারের আবেদন জানাই।

নিহতর বাবা ছোবাহান কবিরাজ অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের কিছুদিন পরে থেকেই যৌতুক টাকার জন্য আমার মেয়েকে মাঝেমাঝেই মারধর করতো এনিয়ে অনেক বার পারিবারিক ভাবে মিটমাট করেছি। তবে আমি বুঝতে পারেনি এ-ই যৌতুকের টাকার জন্য আমার মেয়েকে জীবন দিতে হবে। মাসুদ ও তার পরিবারের লোকজন মিলে আমার মেয়েকে অত্যাচার করে মেরে ফেলেছ। এবং মারার পরে ঘরে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে চাইছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ময়না তদন্তের সঠিক রিপোর্ট পাইনি। তাই কোর্টে আবেদন করেছিলাম পুন:রায় ময়না তদন্তের জন্য। আশা করি এবার সঠিক রিপোর্ট পাব। আমি প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের কঠিন বিচার চাই।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসনে চৌধুরী জানান, গৃহবধূর লিয়ার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্ট নিহতের পরিবারের মনমতো না হওয়ায় লাশ উত্তোলনের জন্য আবেদন করে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ফের তদন্ত করার জন্য পাঠানো হয়েছে।